Wednesday, May 28, 2014

অটিজম নিয়ে কিছু কথা

অটিজম নিয়ে কিছু কথা
আব্দুল লতিফ
প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী, স্কুল পরিচালনা কমিটি, স্কুল অব জয়,
শিক্ষক, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি 

অটিজম আক্রান্ত শিশু অন্যান্য শিশু থেকে আলাদা। তারা অন্যদের মতো ভাষা জানে না, যোগাযোগ করতে জানে না বা চায় না। সঠিকভাবে কারন জানা না গেলেও এওটুকু জানা গেছে এটি একটি নিঊরো-ডেভেলাপমেন্টাল ডিসওর্ডার। সাধারনত অটিজম আক্রান্ত শিশুর মধ্যে দুধরনের সমস্যা দেখা যায়। একটি হলঃ ঘাটতি অন্যটি হলঃ আধিক্য।
যে দুঠি দিকে ঘাঠতি দেখা যায় সেগুলো হলঃ ১। ভাষাগত ও ২। সামজিক দক্ষতা আর আধিক্য থাকতে দেখা গেছে – আচরণে।
ভাষাগত ঘাঠতি যেসব দিকে দেখা যায় সেগুলো হলঃ
ক। মৌখিক যোগাযোগঃ শিশুরা ভাষার দক্ষতার অভাবে এ ধরনের যোগাযোগ করতে পারে না।
খ। ভাষা বুঝে নেয়ার ক্ষমতাঃ কথা বুঝে নিতে হলে যে ক্ষমতা দরকার তা এসব শিশুদের থাকে না।
গ। ইকোলেলিয়া (একই শব্দ বা কথা বারবার অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলা)ঃএসব শিশু একই শব্দ বা কথার অপ্রয়োজনে বার বার বলে থাকে।
কেউ কেউ সাথে সাথে বলতে থাকে আবার কেউ কেউ শোনার কিছুক্ষন পরই শুরু করে।
প্রায়ই অপ্রাসঙ্গিকভাবে এসব পুনরাবৃত্তি করে থাকে।
ভাবের আদান প্রদানের জন্য করে না।
অনেকে অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্যই করে থাকে।
কথা বলার সময় যে ছন্দ, স্বরের স্তর, জোর প্রদান, ভলিউম দেয়া হয়ে থাকে ভাবকে অর্থবোধক করার জন্য । সেভাবে তারা বলতে পারে না।
তারা আলাপচারিতা চালিয়ে যেতে পারে না তাদের আগ্রহের অভাবে, ভাষার দক্ষতার অভাবে ও বিভিন্ন প্রসঙ্গে যেতে পারে না বলে।
২। সামাজিক দক্ষতার অভাবঃ সামাজিক দক্ষতার ক্ষেত্রে যেসব দিকে এদের যোগ্যতার অভাব পরিলক্ষিত হয় সেগুলো নিম্নরুপঃ
ক। অমৌখিক যোগাযোগঃ যোগাযোগের অধিকাংশ অংশ জুড়ে রয়েছেঃ  অঙ্গভঙ্গি, চোখের যোগাযোগ, মুখের ভাব। এসব শিশুরা তাদের যোগ্যতার অভাবে তা করতে পারে না।
খ। সহপাঠিদের সাথে সম্পর্কঃ সহপাঠিদের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ঊঠে না কারন এ ধরনের সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় অনেক যোগ্যতাই তাদের মধ্যে থাকে না। তাদের মধ্যে যে ভাষার দক্ষতা দরকার তার অভাব ও তাদের শিক্ষার লেবেল আলাদা থাকায় এ সমস্যা হয়ে থাকে।
গ। শেয়ার করার অভিজ্ঞতা ( যৌথ মনোযোগের অভাব)ঃ নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে আমাদেরকে বিষয়টাকে নির্দেশ করতে হয়, বক্তার দিকে তাকাতে হয় এবং বক্তার ব্যবহ্রত ভাষা বুঝতে হয়। অটিস্টিক শিশুরা এগুলো করতে পারে না বলে অভিজ্ঞতা শেয়ার করা বা যৌথ মনোযোগে কাজ করতে পারে না।
ঘ। খেলাধুলা করতে পারাঃ এ ধরনের শিশুদের এ দক্ষতারও অভাব থাকে। তাদের বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা ,করার জন্য যে যোগ্যতা দরকার তা তাদের নেই। তারা শিশুদের অনুকরনমুলক বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহনের জন্যে যে অভিনয় কলা দরকার তা দেখাতে পারে না। তারা মিছেমিছি বরকনে সাজা, ঘাস দিয়ে রান্না বান্না করা বা পুতুলকে দুধ খাওয়ানো জাতীয় খেলায় অংশগ্রহন করতে পারে না এবং করেও না।
অটিস্টিক শিশুর মধ্যে যে দিকে আধিক্য রয়েছে তা হল তাদের আচরনগত দিক। এ দিক দিয়ে তারা অনেকেই হাইপার একটিভতারা নিজে নিজেই হঠাৎ করে অধিক মাত্রায় উত্তেজিত হয়ে উঠে। হাত পায়ের ছোড়াছোড়ী বা চিৎকার দেয়া শুরু করে। এ ধরনের আচরন তাদের শিক্ষা ও সামাজিক আচরনে প্রভাব বিস্তার করে।
ছোট খাট অনেক জিনিস যেমন একটি সুতা, রশি, বা খেলনা গাড়ির টায়ার ইত্যাদি নিয়ে অতিমাত্রায় ব্যস্ত হয়ে পরে আর কোন দিকেই এদের খেয়াল থেকে না। সারাদিন হয়ত এই জিনিসটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করল, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও হাত থেকে রাখে না।
ক্রোধান্বিত হওয়াঃ এসব শিশুরা ক্রোধান্বিত হয়ে কান্নাকাটি করে, চিৎকার দিয়ে নিজেকে আঘাত করে, অনেকে আবার  আক্রমনাত্নক আচরন করে (অন্যকে আঘাত ) থাকে।  কোন শিশু কিছু পাওয়ার জন্য, কোন পরিবেশ থেকে চলে যাওয়ার জন্য অথবা কারো মনোযোগ পাওয়ার জন্য  এ ধরনের আচরন করে থাকে।                  
অটিজম ম্যানেজমেন্ট এর প্রধান বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হল ABA ( Applied Behavior Analysis): যার বিভিন্ন উপাদানগুলো হলোঃ The Discrete Trial Training (DTT), Natural Environment Training (NET),  Prompting, Reinforcement.
অটিস্টিক শিশুকে যত তাড়াতাড়ী ট্রেনিং এর আওতায় আনা যাবে, ততই তার সীমাবদ্ধতাগুলো কমে আসায় সম্ভাবনা বাড়বে। তবে মনে রাখতে হবে এদের সমস্যা কখনো ১০০% কমবে না। প্রশিক্ষন দিয়ে তাদের জীবন পরিচালনার একান্ত প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো শেখানো গেলে, তাই অনেক কিছু মনে করতে হবে।  


No comments:

Post a Comment